• +8801618187085
  • debatefordemocracybd@gmail.com
Awesome Image

দুনীর্তি প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদ

কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে যে দুনীর্তি হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহৎ দুনীর্তির একটি খন্ডিত চিত্র। বিগত সরকারের আমলে বলা হয়েছিল ফেরি করে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। এত বিদ্যুৎ গেল কোথায় ?

গত ৩১ আগস্ট, ২০২৪, শনিবার এফডিসিতে দুনীর্তি প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুনীর্তি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে জাতীয় সংসদ। কিন্তু বিগত সরকার সংসদকে পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত করায় সেই সংসদ দুনীর্তি প্রতিরোধে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে বিগত সময়ে ব্যাপক মাত্রায় দুনীর্তির প্রসার হয়েছে। দুনীর্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছিল। এমন কোন অপরাধ ঘটেনি যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সম্পৃক্ততা ছিল না। দুনীর্তির স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে। যারা আইনের রক্ষক হওয়ার কথা ছিল তারা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দুনীর্তি দমন কমিশনের নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দুনীর্তি প্রতিরোধে দুনীর্তি দমন কমিশন পুনর্গঠনের প্রয়োজন। এছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস এবং বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের যথাযথ সংস্কার করতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির সাথে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুনীর্তির যে অভিযোগ এসেছে তা নাকচ করা যায় না। রাষ্ট্র এই অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাঁচার হয়েছে তা দেশের প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে পাচারকৃত দেশের সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের আইনি সমঝোতা করতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, সর্বগ্রাসী দুনীর্তি বাংলাদেশের ইতিহাসের বড় কালো দাগ। সর্বস্তরে দুনীর্তি ক্যান্সারের রূপ ধারণ করেছে। দুনীর্তির এই ক্যান্সার অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বতীর্কালীন সরকার। আমরা দেখেছি দুনীর্তিবাজরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর তাদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতো দুদক। প্রকৃত দুনীর্তিবাজদের আইনের আওতায় না এনে রাজনৈতিকভাবে হয়রানীর জন্য বিরোধী মতের লোকদের নামে মামলা, জেল—জরিমানা করতে দেখা গেছে দুদককে। যারা দুদকের মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হচ্ছে তাদের হয়রানী মুক্ত করা উচিৎ। আমরা সকলে জানি কিভাবে বিগত সরকার বিনা ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের সকল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙ্গে দিয়েছিল। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। গুম—খুন, আয়নাঘরের সৃষ্টি করে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছিল। সবই করা হয়েছে বহুমাত্রিক দুনীর্তির ওপর ভর করে। বিগত সরকার তার পতনকালে দেশের জনগণের কাঁধে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক ঋণের বোঝা রেখে গেছে। দেশের বর্তমান অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুনীর্তি হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যাংক—বীমা, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানী, পরিবহন, যোগাযোগ, কৃষিসহ সর্বক্ষেত্রে দুনীর্তির বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল বিগত সরকার। শেয়ার বাজার কারসাজির মাধ্যমে কিভাবে মানুষকে রাস্তার ফকির বানানো হয়েছে তা সকলের জানা আছে। 

জনাব কিরণ আরো বলেন, কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে যে দুনীর্তি হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহৎ দুনীর্তির একটি খন্ডিত চিত্র। বিগত সরকারের আমলে বলা হয়েছিল ফেরি করে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। এত বিদ্যুৎ গেল কোথায় ? মফস্বলে এখনো প্রতিদিন গড়ে ৬/৭ ঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। এখন এমন এক অবস্থা বাতি না জ্বালালেও মিটার ঘুরে। বিদ্যুৎ বিল বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে এসেছে যা সাধারণ মানুষের সামর্থের বাইরে চলে গেছে। আমার দেশের কৃষক, দিনমজুর, রিক্সাচালক, ঠেলাগাড়িওয়া কোন দুনীর্তি করে না। যারা রাষ্ট্র বা সরকারের সুবিধাভোগী তাদের বিরুদ্ধে দুনীর্তির অভিযোগ। দেশে আয় বৈষম্য দূর করে দুনীর্তিমুক্ত করতে না পারলে ছাত্র জনতার এই সফল বিপ্লব ধরে রাখা যাবে না। 


ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারী অপেক্ষা ব্যক্তি সচেতনতাই দুনীর্তি প্রতিরোধ করতে পারে” শীর্ষক প্রস্তাবে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন,  ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মহি উদ্দিন, সাংবাদিক রোকসানা আমিন ও সাংবাদিক আতিকা রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। 
 

Awesome Image

DFD, Author

Live Chat